জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে মানুষের হাতে খাবার টাকা নেই৷ সেখানে ফোন কিনবে কী করে? যাইহোক না কেন ফোন কিনতেই হবে। তাই আগে, যে ফোন ₹10,000 টাকায় আমরা পেতাম সেই ফোন কিনতে এখন আমাদের ₹20,000 টাকা খরচা করতে হচ্ছে তা সত্ত্বেও আমরা ফোন কিনব। কিন্তু ওই ফোন কেনার আগে এটা আমাদের সবার আগে ভেবে রাখতে হবে যে, এখন আর ভ্যালু ফর মানি ফোন পাওয়া যায় না। তবুও ₹20,000 টাকা বাজেটে কোন ফোনগুলো সেরা হতে পারে সেটা আমরা বেছে নেব এবং এখন আরও সাবধানে আরও ভালভাবে বেছে নেব। কারণ এখন আমাদের আরও বেশি টাকা খরচা করে এই টানাটানির সময় একটা স্মার্টফোন কিনতে হচ্ছে।
আজকের ব্লগে আমরা ভারত এবং বাংলাদেশ দু-দেশেই ₹20,000 টাকা বাজেটে কোন ফোনগুলো সেরা হবে সেই ব্যাপারে বলব। প্রথমে বাংলাদেশ দিয়েই শুরু করি। তারপর ভারতের ব্যাপারে বলব।
ইন্ডিয়াতে ₹20,000 টাকার মধ্যে যত স্মার্টফোন রয়েছে তার থেকে বাংলাদেশ তুলনামূলক কম স্মার্টফোন পাওয়া যায়। সেই হিসাবে ইন্ডিয়াতে এত স্মার্ট ফোন আমাকে বেছে নিতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে৷ তবুও আমি চেষ্টা করেছি লিস্ট টাকে যত কমে রাখা সম্ভব। লিস্ট ছোট রাখার জন্য এবং আপনাদের পছন্দ - আমার পছন্দের সাথে মিলে কিনা সেটা দেখুন এবং শেষে কমেন্ট করে জানান যে আপনি কোন ফোনটা রেকমেন্ট করছেন তাহলে দেরি করে লাভ কি? চলুন আমরা মূল বিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
বাংলাদেশে 20,000 হাজারে টাকায় সেরা মোবাইল ফোন
প্রথমেই বলে নিই যে বাংলাদেশে 20,000 টাকার নিচে যদি কোনো ফোন কিনতে হয় তাহলে, ধরে নিন সেই 4G ফোন হবে। সেই ফোনে মিডিয়াটেক হেলিও G99 বা খুব বেশি হলে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 695 বা 685 এরকম প্রসেসর থাকবে। আর একটা কমন ব্যাপার থাকবেই প্রতিটা ফোনে 5000mAh ব্যাটারি থাকবে। তবে একটা ভাল জিনিস এই যে, এখন আর এই দাম দিয়ে আমাদের এইচ-ডি প্লাস ডিসপ্লে কিনতে হয় না। আমরা এখন ফুল এইচ-ডি প্লাস ডিসপ্লে পাই।
Symphony helio 80
আমরা প্রথম যে ফোনটা বেছে নিয়েছি বাংলাদেশেরেই একটা ব্র্যান্ড “সিম্ফনি”। জানি জানি সিম্ফনির ফোনের অনেক খারাপ রিপোর্ট আছে। তবুও ফোনটার স্পেসিফিকেশন কিন্তু সত্যিই আকর্ষণীয়। Symphony helio 80 এটি 120 Hz, 6.78 ইঞ্চির একটা ডিসপ্লে রয়েছে , এবং সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে। তবে ডিসপ্লে একটা ভাল ব্যাপার যে, এখানে গরিলা গ্লাস ফাইবারের প্রোটেকশন আছে। অবশ্যই যে-রকম বলেছিলাম মিডিয়াটেক হেলিও G99 প্রসেসর রয়েছে, 6 ন্যানো-মিটার এর প্রসেসর এবং ভালো প্রসেস। এই ফোনের আরও একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হল, যেখানে ব্যাক সাইডে 108 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। আজকাল আর এই দামের ফোনে কিন্তু আলট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স পাওয়া যায় না। তো বাকি লেন্স হয়তো 2 মেগাপিক্সেল অথবা VGA লেন্স, এখানেও তাই৷ রয়েছে ফ্রন্টে রয়েছে 16 মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা। তবে এই ফোনের ব্যাটারি 5000 mAh হলেও এই ব্যাটারিতে যে চার্জ দেবো আমরা, সেই চার্জার কিন্তু মাত্র 18W। কোথাও তো একটু কম্প্রোমাইজ করতে হবে। যাই হোক এই ফোনটা রেকমেন্ড করাই যায়।
Realme C55 / Realme Narzo 50 / Realme 10
এরপর Realme C55 ফোন রিকমেন্ট করতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু এই ফোনটা মাঝে মাঝে 20,000 টাকার উপরে পাওয়া যায়। সেটার বদলে ভাবলাম যে Realme Narzo 50 রিকমেন্ট করি। কিন্তু সেই ফোনটা বেশ অনেকদিন হয়ে গেছে। পুরনো ফোন আপনি যদি গেমিংয়ের জন্য ভাবেন তাহলে Realme Narzo 50 ঠিক আছে। তা না হলে আমি বলবো Realme 10 ফোনটা নিতে। এই ফোনটা কিন্তু এখন ২০ হাজার টাকার নিচে বাংলাদেশে পাওয়া যায় এবং ফোনটা তুলনামূলক ছোট ফোন, কমপ্যাক্ট ফোন, কমপ্যাক্ট না হলেও 6.4 ইঞ্চি 90 Hz ডিসপ্লে এবং ব্যাক সাইডে যথারীতি ওই একটাই ক্যামেরা রয়েছে। 50 মেগাপিক্সেলের বাকি সব ভুয়া ক্যামেরা। মিডিয়াটেক হেলিও G99 প্রসেসর রয়েছে। সব মিলিয়ে এটা ওভারঅল একটা ভাল ফোন। বিশেষ করে ফোনটা দেখতেও যথেষ্ট ভালো৷
Xiaomi Redmi 12
এর পর যে ফোনটার কথা বলবো সেটা Realme এর ডাইরেক্ট কম্পিটিশন Xiaomi Redmi 12 । Redmi 12 ফোনে একটা খুব অবাক করা ব্যাপার যে, এখানে আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স রয়েছে। এই ফোনে ক্যামেরা সেটআপ 50+8+2 মেগাপিক্সেল। আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সের জন্যই ফোনটা কমেন্ট করা যেতে পারে। এই ফোনে রয়েছে 120Hz ডিসপ্লে, তবে এখানে গোরিলা গ্লাস থ্রি প্রোটেকশন রয়েছে। সব মিলিয়ে এটা একটা বেশ ভালো ফোন। এখানেও সেই 5000 mAh ব্যাটারি 18 W চার্জার। মানে যা কিছু এই সেগমেন্টে কমন্স, এই ব্যাপারগুলোই আছে।
Infinix Note 30
ছবি সংগৃহীত |
লাস্ট যে ফোনটার কথা বলব সেটা হচ্ছে Infinix Note 30। ইনফিনিক্স ইদানীং ভাল কাজ করছে । Infinix Note 30 ফোনটা কিন্তু সবথেকে বেশি ওয়াটের চার্জার রয়েছে 45 W এই সেগমেন্টের মধ্যে। এখানে ডিসপ্লেও বেশ বড় 6.78 ইঞ্চি ফুল এইচ-ডি প্লাস 120Hz আইপিএস এলসিডি প্যানেল। তবে ডিসপ্লের কোওয়ালি কিন্তু বেশ ভাল। এই ফোনের ব্যাক সাইডে রয়েছে একটাই কাজের ক্যামেরা 64 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। ফ্রন্টে রয়েছে 16 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এছাড়া 5000 mAh ব্যাটারি। ইনফিনিক্সের নোট 30 ফোনটা কিন্তু 8GB 128GB ভেরিয়ান্ট সেটা কিন্তু 20 হাজার টাকার নীচে বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতে 20,000 হাজারে টাকায় সেরা মোবাইল ফোন
vivo T2 Pro / iQoo Z7 Pro / Motorola Edge 30 Neo
এবার ইন্ডিয়াতে চলে আসি। ইন্ডিয়াতে ₹20,000 টাকা যদি বাজেট আমরা ধরি তাহলে সেখানে কিন্তু প্রচুর ফোন আসছে এবং ₹20,000 একটু যদি পার করি তাহলে দেখা যাবে দুটা বাঘা বাঘা ফোন বসে আছে৷ আসলে 2 টা নয় 3টা ফোন বসে আছে। একটা vivo T2 Pro, একটা iQoo Z7 Pro, আর একটা Motorola Edge 30 Neo। যদি আপনি কোনও ভাবে ডিসকাউন্ট দিয়ে 20 হাজারের নীচেই ফোনগুলো পেয়ে যান। অফার যদি থাকে, তাহলে অবশ্যই চোখ বুজে এই তিনটে ফোনের যে কোনও একটা নিয়ে নিতে পারেন।
তার মধ্যে আমার রেকমেন্ড থাকবে iQoo Z7 Pro। কার্ভ ডিসপ্লে, ভালো দেখতে ফোন, ভালো ক্যামেরা এবং তার সাথে সাথে ভাল পারফরম্যান্স। কিন্তু যদি আপনার বাজেট টাইট হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব
Poco X5 Pro
ছবি সংগৃহীত |
ইন্ডিয়াতে সবার আগে যে ফোনটা দেখতে পারেন সেটা হচ্ছে Poco X5 Pro। Poco X5 Pro এই সেগমেন্টের একমাত্র ফোন। যে ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 778G এই প্রসেসর রয়েছে। বাদবাকি সব ফোনের ক্ষেত্রেই কিন্তু কমন স্ন্যাপড্রাগন 695 প্রসেসর অথবা মিডিয়াটেক 80, 50, 70 সিরিজের কোনও একটা প্রসেসের। Poco ফোনের আরেকটা ভালো ব্যাপার। এখানে 108 মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সেন্সর এর সাথে সাথে আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স রয়েছে যেটা আজকাল কোম্পানিরা দিচ্ছেই না। এছাড়াও Poco X5 Pro তে রয়েছে অ্যামোলেড ডিসপ্লে যথেষ্ট ভালো ডিসপ্লে এবং ভয় আছে সেই ডিসপ্লেতে কোনও দিন গ্রিনলাইন এসে যেতে পারে, Poco তো ভরসা করা যায় না।
যে কোনওদিন আপডেট আসবে ফোন ডেড হয়ে যাবে। এই ভয়টা আছে তবে এখন ইদানীং Poco খুব ভালো কাজ করছে। তারা অফিসিয়ালি বলেছে ফোনে কোনও রকম আপডেটে সমস্যা হলে তারা ফোন রিপ্লেস করে দেবে। এই ভরসা এই সাহসে যদি আপনি Poco X5 Pro নিতে পারেন তাহলে একটা ভালো ফোন পাবেন। বিশেষ করে এই ফোনে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে যেটা Xiaomi ট্র্যাডিশন এবং খুব ভালভাবে কাজ করেছে। 5000 mAh ব্যাটারি 67 W ফাস্ট চার্জার, ওভারঅল এই ফোনটা কিন্তু একদম কমপ্লিট প্যাকেজ 20,000 টাকার নিচে।
Motorola Moto G84
Poco X5 Pro বিকল্প হিসাবে আমি যে ফোনটা কথা বলতে পারি সেটা Motorola Moto G84 ফোন। আপনারা অনেকেই বলেন আমি মোটোরোলার ফোন রিভিউ করার সময় ভালো বলি কিন্তু রিকমেন্ট করার সময় মোটোরোলা ফোনের কথা বলি না কেন? এই Moto G84 সত্যি সত্যিই ভাল ফোন। দেখতে দুর্ধর্ষ, ওই প্যান্টোন রেড কালার টা আছে। একদম মন চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া মোটোরোলার ক্লিন UI যেটাতে মোটোরোলা বলে আপডেট দেবে। কিন্তু আলটিমেটলি দেয় না।
তবে এই ফোনে সত্যিই 6.5 ইঞ্চি 120 Hz, POLET ডিসপ্লে রয়েছে। ডিসপ্লে টা সত্যিই ভালো ডিসপ্লে। ডিসপ্লের কালার ভালো ব্রাইটনেস ভালো ডিউয়িং অ্যাঙ্গেল ভালো শুধু ডিসপ্লের জন্য ফোন কিনতে ইচ্ছে করবে এমনই ভালো ডিসপ্লে। এই ফোনে 5000 mAh রয়েছে তবে চার্জার এই ২০ হাজারের বাজেট হিসাবে একটু কম মনে হয় 30 W চার্জার রয়েছে বক্সে। কোয়ালকম স্নাপড্রাগ 695 প্রসেস যেটা দিয়ে টুকটাক গেমিং হবে ক্যাজুয়াল গেমিং হবে একদম হাই সেটিং নিয়েই খেলতে গেলে চলবে না মানে গরম হয়ে যাবে। তবে এই ফোনের সবথেকে খারাপ দিক রয়েছে যেটা মোটোরোলার ক্যামেরা। ক্যামেরা এখানে ঠিকঠাক কিন্তু ভাল বলা যাবে না। এর পর আরেকটা ফোন বলব যেখানে কোন কোয়ালকম স্নাপড্রাগ 695 প্রসেসর রয়েছে।
OnePlus Nord CE 2 Lite
ছবি সংগৃহীত |
OnePlus Nord CE 2 Lite যথেষ্ট ভালো দেখতে ফোন। একদম নোট সিরিজের ফোনের মত দেখতে দেখতে ফ্ল্যাগশিপ ফোন মনে হয় কালার গুলো খুব সুন্দর। এই ফোনেও রয়েছে ক্লিন UI অক্সিজেন OS. এখনও যতোই কালার OS এর মতো হয়ে যাক তবুও তার নিজস্বতা কিছু বজায় রাখতে পেরেছে। আপডেট ও ভালো আছে। এছাড়া এখানে ডিসপ্লেটা আছে ডিসপ্লেও বেশ ভালো 120 Hz ডিসপ্লে তবে ডিসপ্লেটা কিন্তু আইপিএস ডিসপ্লে। কিন্তু OnePlus Nord CE 2 Lite একটাই সমস্যা যে এই ফোনে কোনও আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স নেই, ভাবা যায় ₹20,000 টাকায় আজকালকার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স পাওয়া যায় না। তবে হ্যা, এই ফোনটা ক্যামেরার কিন্তু প্রাইমারি সেন্সার যেটা খুব ভালো ছবি তোলে।
Lava Agni 2 / Infinix GT 10 Pro
এছাড়া 20,000 টাকার বাজেটে Lava Agni 2 যথেষ্ট ভালো ফোন। Infinix GT 10 Pro সেটাও কিন্তু বেশ ভাল। বিশেষ করে যারা একটু ফাঙ্কি লুকের ফোন কিনতে পছন্দ করেন তারা Infinix GT 10 Pro দেখতে পারেন। Infinix GT 10 Pro এর প্রসেসর ও যথেষ্ট ভাল। তবে হ্যা, ইনফিনিক্সের UI সেখানে গিয়ে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হয়৷ তবে আমার মনে হয় আমি যে কটা ফোন বললাম যে কটা ফোনের মধ্যে কোন ফোন কিনলে আপনি খুব একটা ঠকবেন না।
তবে আপনার একটা দায়িত্ব থেকে যাবে যে, আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে এই ফোনের মধ্যে কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে আপনি যদি ফোটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে যে ফোনটা আপনি কিনবেন, আপনি গেমিংয়ের প্রতি আগ্রহী হলে নিশ্চয়ই সেই ফোনটা কিনবেন না। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবহার বুঝে আপনাকে নিজের পছন্দমতো ফোনটা নিতে হবে। আমি শুধু আপনার বেছে নেওয়ার জন্য কিছুটা সাহায্য করলাম মাত্র।
তাহলে উপরের কোন ফোন গুলোর প্রতি আপনার আগ্রহ বেশি তা কমেন্টে জানাতে পারেন এবং কোন ফোনটি আপনি নিজে বর্তমানে ব্যবহার করছেন সেটিও জানিয়ে দিতে পারেন।
ডিসক্লেইমার
উপরের তথ্যগুলো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপরেও তথ্যে ভুল থাকতে পারে। আরো পড়ুন
আপনাদের মতামত আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই অবশ্যই আপনার মতামত প্রকাশ করতে আমাদের কমেন্ট বক্স ব্যবহার করুন......