আপনি একটি মোবাইল মেসেজে একটি আকর্ষণীয় পুরস্কার জিততে পারেন এমন একটি লিঙ্ক পেয়েছেন, কিন্তু এটি একটি ফিশিং লিঙ্ক হতে পারে যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই লিঙ্কটি খোলার আগে খুব সতর্ক হোন, কারণ এটি আপনাকে বিভিন্ন জোখমে ফেলতে পারে এবং আপনার জন্য ভয়ানক সময় সৃষ্টি করতে পারে।
ফিশিং লিঙ্ক কী, কিভাবে আসে?
ফিশিং লিঙ্ক হলো এমন একটি ওয়েব লিঙ্ক, যা ব্যবহারকারীকে ধারণ করিয়ে সাধারিতভাবে কোনো আকর্ষণীয় বা জরুরী অবস্থা তৈরি করে এবং তার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অথবা লগিন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটি একটি ধারণা, যেটি ব্যবহারকারীকে আকর্ষিত করতে বা উৎসাহিত করতে ব্যবহৃত হয়, এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য অর্জন করা হতে পারে। "ফিশিং" শব্দের ব্যবহার মাছ ধরার ধারণার সাথে তার সাম্য রয়েছে, কিন্তু এটি ওয়েব সিকিউরিটি প্রস্তুতির মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলছেন, এটির কাজ হলো ব্যক্তিগত বা পেশাদার তথ্য যেমন ইমেইল, পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের পিনকোড ইত্যাদি চুরি করা। এই ধরনের তথ্যের মাধ্যমে অর্থ আদায় করার জন্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে শুরু হয়, এবং এটি আপনার মাধ্যমে অন্যকে ফিশিং বার্তা পাঠানো যায়।
সবচেয়ে ভয়াবহ হল আপনার অজান্তে ইমেইলের নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে আপনার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেটি ব্যবহার করে অন্য কোনো অপরাধ সংগঠিত করা। ফিশিং লিঙ্কের মাধ্যমে এরকম অনেক কিছুই সম্ভব।
চেনার উপায় কি?
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলেছেন, এটি মনে হতে পারে যে এটি কোনও ওয়েবসাইটের মতো, কিন্তু সঠিকভাবে মনোনিবেশ করলে ওয়েব ঠিকানায় কিছু পৃষ্ঠতা দেখতে পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠিয়েও, 'ডোমেইন নেম' আলাদা থাকতে পারে।
ফিশিং লিঙ্কের ক্ষেত্রে ডোমেইন নেম অপরিচিত, অস্বাভাবিক এবং অমিলিত হতে পারে। বানান এবং ব্যাকরণে ভুল থাকতে পারে এবং ফিশিং লিঙ্ক স্প্যামের মাধ্যমে ইমেইল বা মেসেজিং অ্যাপে আসতে পারে। এই লিঙ্কে সাধারিত প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশের ধারণা দেওয়া হতে পারে এবং লোভনীয় অফার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
যেমন কোন এয়ারলাইনগুলি তাদের সার্বিক প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দশজন ভ্রমণকারীদের মুক্ত টিকেট প্রদান করতে পারে, কনসার্ট টিকেট অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে, লটারিতে অর্থ জিততে পারেন, এবং আইফোন প্রাপ্ত করতে পারেন এমন অনেক সুযোগ বা উপহার উপাধি প্রদান করতে পারে। তবে, এই অফারগুলি সব সময় একই হয় না, কারণ প্রতারকরা দেশ ভিত্তিক নিয়ম পুনরায় পরিবর্তন করতে সচেষ্ট থাকে।
মনে রাখবেন, কেউ বিনামূল্যে কিছু দেয়না। যদি কোন অজানা প্রতিষ্ঠান কোনো অফার দেয়, তাদের সেই অফারটি সামাজিক যোগাযোগ অথবা গণমাধ্যমে ঘোষণা করে থাকে। এই কারণে, তাদের ওয়েবসাইট এবং সোশাল মিডিয়ার ভেরিফায়েড পৃষ্ঠাগুলি পরীক্ষা করে আগে যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।
বাঁচার জন্য যা করতে পারেন
তবে, যদি কেউ সেই লোভনীয় লিঙ্কে ক্লিক করে পৌঁছায়, তাহলে দ্রুত সকল ধরনের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলা উচিত। ফোনটি রিসেট করতে পারেন। একটি ভালো মানের অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার দিয়ে মোবাইল স্ক্যান করে নিতে হবে। আর যদি ফোনে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করা উচিত।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ তার মতে, মোবাইল ফোনের নিজস্ব নিরাপত্তা ফিচারগুলো চালু থাকলে এই ধরনের ফিশিং লিঙ্কের উৎপাত থেকে কিছুটা রক্ষা হতে পারে। অনেকে মোবাইল ফোনের ইনবিল্ট নিরাপত্তা ফিচারগুলো ডিজেবল করে রাখতে অভ্যন্তরীণ কাজের সুবিধা পাওয়ার জন্য, যা কিন্তু আসলে আমাদের সুরক্ষার জন্য তৈরি। এই ফিচার চালু করলে অন্তত সে আমাদের অ্যালার্ট করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও জানান, এখন বেশ কিছু অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার রয়েছে যা অ্যালার্ট জানিয়ে থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে এমন লিঙ্ক ব্লক করতে সক্ষম। বিনামূল্যে পাওয়া যায় যা কিছুটা নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে, তবে মূল্য পরিশোধ করা সংস্করণগুলিতে বেশি নিরাপত্তা থাকতে সম্ভাবনা আছে।
এই অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারগুলি সাধারিতভাবে মোবাইলের গতি কমিয়ে দেয়।
আপনাদের মতামত আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই অবশ্যই আপনার মতামত প্রকাশ করতে আমাদের কমেন্ট বক্স ব্যবহার করুন......